সেটা প্রকাশিত হতে দেরী হয় না। সুস্মিতার লেখা ছড়া ভীষণ মনে ধরে যায় মুর্শিদাবাদ থেকে আশা তার চাচার বন্ধু নির্মল সরকারের। আর সেই ভালোলাগার সূত্র ধরেই দেশেই বাইরে পশ্চিমবঙ্গের '' সূর্যসেনা '' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সুস্মিতা বিশ্বাসের প্রথম লেখা।

ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পর গল্পের নদীতে খানিকটা ভাটা পড়লো। সুস্মিতা এবার হাত দিলেন কবিতা লেখায়। নাতিদীর্ঘ অতীতের ধারাবাহিকতায় এখনেও পেলেন সাফল্য। স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হতে থাকলো কবিতা। আর বাসায় গানের ওস্তাদ রেখে শুরু হলো গান শেখাটাও। প্রফুল্ল রায়ের কাছে সংগীতের হাতেখড়ির পর ক্লাসিক্যাল এবং আধুনিক গানের তামিল নিলেন বিষাণ চন্দ্র মণ্ডলের কাছে। আসলে গীতিকার হিসেবে সুস্মিতা বিশ্বাসের যে পরিচিতি তার শুরুটাও ছিল এই সময়ই। সুস্মিতার লেখা কবিতার কথা সবাই কমবেশি জানতেন। জানা ছিল গানের শিক্ষক প্রফুল্ল রায়েরও। একদিন তিনি সুস্মিতাকে বলেছিলেন শ্যামা সংগীত লেখার জন্যে। সেই শ্যামা সঙ্গীত থেকেই শুরু। এরপর যখনই যুতসই কোনো বিষয় মাথায় আসতো তখন সেটিকে গানের ছন্দে বন্দি করার জন্যে অস্থির হয়ে যেতেন সুস্মিতা। এইট - নাইনে তার গান গাওয়া হলো মঞ্চেও। আসলে সুস্মিতার আরেক সঙ্গীত শিক্ষক বিধান চন্দ্র মণ্ডলই সুস্মিতার লেখা আধুনিক দুটি গানের সুরারোপ তা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় শ্রোতাদের মাঝে। এর ফলে রাতারাতি খ্যাতি না এলেও মানুষের কাছে পরিচিতি আর অল্প বয়সে গান লেখার বিস্ময়কর প্রতিভার স্বীকৃতি- এ দুটোই পেয়েছিলেন সুস্মিতা।
গীতিকার হিসেবে সুস্মিতার আত্মবিশ্বাসের পালে যখন সবে একটু আধটু হাওয়া লাগতে শুরু করেছে ঠিক তখনই পরিচয় হয় কণ্ঠশিল্পী মুন আর লিমন এর সাথে। এর দু'জনই তখন ভালো গান করেন। সুস্মিতার লেখা গান কিংবা কবিতার প্রশংসা উঠে আসে তাদের কণ্ঠেও। কিন্তু খুলনার মেয়ে সুস্মিতার সাথে তাদের যোগাযোগটা ছিল শুধু ফোনেই। এর মাঝে লিমন একদিন তাকে পরামর্শ দেন জনপ্রিয় সুরকার হাবিব ওয়াহিদের সাথে যোগাযোগ করার। আর সবার মতই সুস্মিতার কাছেও হাবিব মানেই অন্যরকম ক্রেজ। তাই একদিন সাহস করে হাবিবের বাসায় ফোনও করলেন তিনি। কথা হলো হাবিবের বাবার সাথে। তিনি পরামর্শ দেন হাবিবের সহকারী মোশাররফ এর সাথে যোগাযোগ করতে। যোগাযোগ হলো। উৎসাহ পেয়ে গানও পাঠিয়ে দিলেন তিনি। এই গানগুলোর মধ্যে "স্বপ্নের চেয়ে মধুর" গানটি প্রথম দেখাতে হাবিবের এতোটাই ভালো লেগে গিয়েছিল যে মাত্র দু'দিনের মাঝে গানের কথায় সুর বসিয়ে সুস্মিতাকে ভীষণ চমকে দেন হাবিব। আর হাবিবের প্রথম সলো অ্যালবাম "শোনো"র অংশ হয়ে যখন বাজতে থাকে আশেপাশের সব জায়গায় তখন বিস্ময়প্রতিভা সুস্মিতার নিজেরই বিস্মিত হবার পালা। "শোনো " অ্যালবামের পর হাবিবের সর্বশেষ অ্যালবাম "বলছি তোমাকে" র সবগুলো গানই ছিল সুস্মিতার লেখা। সে সুবাদে সুস্মিতা বিশ্বাস সাথী নামটির সাথেও এখন কমবেশি সবাই জনপ্রিয়। তবে হাতগোনা দুটি অ্যালবামের হাত ধরেই যে জনপ্রিয়তার দেখা সুস্মিতা পেয়েছেন সেটি তাকে আরো বিনয়ী করে তুলেছে । নিজের গান নিয়ে সুস্মিতা উচ্চকণ্ঠ নন। এমনকি জনপ্রিয়তার হাত ধরে খ্যাতির পেছনে ছোটার মানসিকতাও নেই নিভৃতচারী এই গীতিকারের। আর সময়ের মূল লক্ষ্য, মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাওয়া গোল্ডেন এ প্লাস ধরে রাখতে হবে উচ্চ মাধ্যমিকেও।
কারণ গান হোক কিংবা পড়াশোনা , কোনো জায়গাতেই শেষের কাতারে থাকতে চান না সুস্মিতা।
লেখাঃ রাশেদুল হাসান শুভ
প্রকাশিতঃ বিনোদন বর্ষ ৬ সংখ্যা ১১
তারিখঃ জুন ২৫-জুলাই ০৯, ২০০৮
https://www.youtube.com/watch?v=lmm4w8i-ccg
No comments:
Post a Comment